উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার (original) (raw)
নির্বাচিত লেখা
বুড়ো আংলা প্রখ্যাত সাহিত্যিক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ। নোবেল পুরস্কারজয়ী সুইডিশ লেখিকা সেলমা ল্যাগেরলফ দ্বারা ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে রচিত নিলস হোল্গেরসন্স আন্ডারবারা রেসা জিনোম স্বেরিজ নামক শিশুতোষ গল্পগ্রন্থটি থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করে অবনীন্দ্রনাথ এই গ্রন্থটি রচনা করেন। ১৩২৭-২৮ বঙ্গাব্দে মৌচাক নামক পত্রিকায় বুড়ো আংলা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়, যা ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। সুইডেন থেকে অবনীন্দ্রনাথের বান্ধবী শ্ৰীমতী আঁদ্রে কাপেলে বড়দিনের সময় ল্যাগেরলফ রচিত এই গল্পের মূল চরিত্র নিলস ও তার হাঁসের খড় নির্মিত পুতুল কিনে অবনীন্দ্রনাথকে পাঠিয়ে দেন। সেই পুতুল দেখে অবনীন্দ্রনাথ এই গ্রন্থের প্রচ্ছদ অঙ্কন করেন। নন্দলাল বসু এই গ্রন্থের বাকি চিত্র অঙ্কন করেন। দুষ্ট ছেলে রিদয় কিভাবে গণেশ দ্বারা অভিশপ্ত হয়ে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ পরিমাণ উচ্চ যক্ষে পরিণত হয়ে শাপমোচনের উদ্দেশ্যে একদল হাঁসের সঙ্গে তিব্বতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, সেই রোমাঞ্চকর কল্পকাহিনী এই গ্রন্থের মূল উপজীব্য।
রিদয় বলে ছেলেটা নামেই হৃদয়, দয়ামায়া একটুও ছিল না। পাখির বাসায় ইঁদুর, গরুর গোয়ালে বোলতা, ইঁদুরের গর্তে জল, বোলতার বাসায় ছুঁচোবাজি, কাকের ছানা ধরে তার নাকে তার দিয়ে নথ পরিয়ে দেওয়া, কুকুর-ছানা বেরাল-ছানার ল্যাজে কাঁকড়া ধরিয়ে দেওয়া, ঘুমন্ত গুরুমহাশয়ের টিকিতে বিচুটি লাগিয়ে আসা, বাবার চাদরে চোরকাঁটা বিঁধিয়ে রাখা, মায়ের ভাঁড়ার-ঘরে আমসির হাঁড়িতে আরশোলা ভরে দেওয়া—এমনি নানা উৎপাতে সে মানুষ। পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, সবাইকে এমন জ্বালাতন করেছিল যে কেউ তাকে দু’চক্ষে দেখতে পারত না। রিদয়ের মা-বাপ ছিল আমতলি গাঁয়ের প্রজা। দুজনেই বুড়ো হয়েছে। রিদয় তাদের এক ছেলে, বয়স হল প্রায় বারো বছর; অথচ ছেলেটা না শিখলে লেখাপড়া, না শিখলে চাষবাসের কাজ; কেবল নষ্টামি করেই বেড়াতে লাগল। শেষে এমন হল যে তার বাপ-মা বাইরে হাটে-মাঠে যাবার সময় রিদয়কে ঘরে তালা বন্ধ কয়েদ করে রেখে যেত।